
এক ম্যাচ হাতে রেখেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে আফগানিস্তানকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় টাইগার অধিনায়ক জাকের আলী। আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে রশিদ-নবিদের ইনিংস থামে ১৪৭ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শেষ দিকে শরিফুল ইসলাম ও নুরুল হাসান সোহানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
শেষ দিকে জয়ের জন্য যখন দরকার মাত্র ১৯ রান, তখন অষ্টম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ২ ওভার বাকি থাকতে তখন উইকেটে আসেন শরিফুল ইসলাম। ১৯তম ওভারেই জয়ের রাস্তাটা সহজ করে দেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। শেষ ওভারে তখন জয়ের জন্য দরকার মাত্র ২ রান। আজমতউল্লাহ’র প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান শরিফুল ইসলাম, আর তাতেই ২ উইকেটের জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে টাইগাররা।
২১ বলে অপরাজিত ৩১ রানের ইনিংস খেলে এদিনও দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন নুরুল হাসান সোহান। আরেক প্রান্তে ৬ বলে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন শরিফুল। বল হাতেও দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। ৪ ওভারে ১৩ রান খরচায় উইকেট শিকার করেছেন ১টি।
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে সবশেষ টানা চতুর্থ সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে যাওয়ার আগে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতে টাইগাররা। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সিরিজ জয়।
এর আগে ২০১৮ সালে হায়দারাবাদে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানদের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০২২ সালে দুই ম্যাচের সিরিজ ড্র হয় ১-১ ব্যবধানে। সবশেষ ২০২৩ সালে ২-০ ব্যবধানে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটি বাংলাদেশ জিতে ৪ উইকেটে। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৪৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই তানজিদ হাসান তামিমের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পারভেজ হোসেন ইমনও এদিন টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। দুজনকেই আউট করেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
এরপর দ্রুতই ফেরেন সাইফ হাসান। ১৪ বলে ১৮ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটারকে সেদিকুল্লাহ’র ক্যাচ বানান মুজিব। ২৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন জাকের আলী অনিক ও শামীম হোসেন পাটওয়ারী। দুজনে মিলে যোগ করেন ৩৭ বলে ৫৬ রান।
দলীয় ৮০ রানে রশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউ-এর ফাঁদে পড়ে জাকের ফিরলে ভাঙে তাদের জুটি। ফেরার আগে ২৫ বলে ৩২ রান করেন তিনি। এরপর শামীমও আর টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ২২ বলে ৩৩ রান করে নূর আহমেদের বলে ধরা পড়েন মুজিবের হাতে।
নাসুম আহমেদ ফেরেন ১১ বলে ১০ রান করে। এরপর সাইফউদ্দিন ও রিশাদ ফেরেন দ্রুতই। দুজনেই টিকেছিলেন ২ বল করে। এরপর নুরুল হাসান সোহান ও শরিফুল দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন। আফগানদের হয়ে আজমতউল্লাহ ওমরজাই নেন ৪ উইকেট। এছাড়া রশিদ খান নেন ২ উইকেট। নূর আহমেদ ও মুজির উর রহমান নেন ১টি করে উইকেট।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই দেখেশুনে খেলতে থাকেন দুই ওপেনার সেদিকুল্লাহ আতাল ও ইব্রাহিম জাদরান। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৩৫ রান যোগ করলেও কোনো উইকেট হারায়নি আফগানরা। তবে ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে থাকেন আতাল ও জাদরান।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে বল হাতে নিজের প্রথম ওভার করতে আসেন রিশাদ হোসেন। তার ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ৫০ রান পূর্ণ করে আফগানিস্তান। পরের বলেই রিশাদ এনে দেন ব্রেক থ্রু। বড় শট খেলতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন সেদিকুল্লাহ আতাল। বল তালুবন্দি করতে কোনো ভুল করেননি পারভেজ ইমন। ফেরার আগে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ১৯ বলে ২৩ রান।
এক প্রান্ত আগলে রেখে দেখেশুনে ব্যাট করছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। কিছুটা ধীরগতিতেই রান তুলছিলেন তিনি। তবে ৩৭ বলে ৩৮ রান করা এই ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরান নাসুম আহমেদ। পরের ওভারেই ওয়াফিউল্লাহ তারাখিলকে ফেরান রিশাদ। সাইফউদ্দিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪ বলে ১ রান।
দ্বারউইশ রাসুলি টিকতে পেরেছিলেন মাত্র ৯ বল। ১৪ রান করা এই ব্যাটারকে পারভেজ হোসেন ইমনের ক্যাচ বানান নাসুম। রহমানুল্লাহ গুরবাজকে বোল্ড আউট করে সাজঘরে ফেরান শরিফুল ইসলাম। ফেরার আগে ডানহাতি এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ৩০ রান।
এরপর আর কোনো বিপদ ঘটতে দেননি আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও মোহাম্মদ নবি। ১৭ বলে ১৯ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন আজমতউল্লাহ। আরকে প্রান্তে ১২ বলে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন নবি। বাংলাদেশের হয়ে নাসুম ও রিশাদ নেন ২টি করে উইকেট। এছাড়া শরিফুল নেন ১ উইকেট।