ফেনী জেলা

ঘাতকের গুলিতে স্তব্ধ ৪ আগস্ট


গত বছরের এই দিনে (৪ আগস্ট) কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফেনীর মহিপালে অনুষ্ঠিত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অবস্থান কর্মসূচি।


কর্মসূচিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতশত ছাত্রছাত্রী ও স্থানীয় জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ করেন মহিপালের গোল চত্বরে। দুপুর গড়াতেই শহরের ট্রাংক রোড় থেকে মহিপালের দিকে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী মুহুর্মুহু গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে আসেন। সেদিন গুলির শব্দ আর বারুদের গন্ধে পরিবেশ ছিল এক বিভীষিকাময় যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায়। ফ্লাইওভারের নিচে আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর ছোঁড়া গুলিতে আহত হন শত শত মানুষ। তখন ফেনী সদর হাসপাতালে আসতে থাকে লাশের পর লাশ। সে যেন ছিল এক লাশের মিছিল। সে দিন গুলিতে প্রাণ হারান ইসতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, সরওয়ার জাহান মাসুদ, মো. সবুজ, ছাইদুল ইসলাম শাহী, জাকির হোসেন শাকিব ও ওয়াকিল আহম্মদ শিহাব। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন শিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান মাসুম। ৭ আগস্ট বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনিও মৃত্যুবরণ করেন।

একদিনে এতবেশি হত্যাকাণ্ড ফেনীর মানুষ কখনও দেখেনি। তাদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস। ঘটনায় বছর পার হলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরে মূল হোতারা। তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি নিহতের স্বজনদের।


শহীদ সরোয়ার জাহান মাসুদের মা বিবি কুলসুম বলেন, সবাই ক্ষমতার পাগল, ক্ষমতার জন্য শেখ হাসিনা আমার সন্তানকে পাখির মতো নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। এক বছর পার হলেও আমরা এখনো কোনো বিচার দেখিনি। আমরা চাই মূল আসামিদের বিচার। আমরা চাই না আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক।

শহীদ ওয়াকিল আহম্মেদ শিহাবের মা মাফুজা আক্তার বলেন, এক বছর পূর্ণ হল এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার হয়নি। আমরাতো হতাশায় দিনপার করছি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার নিকট আবেদন করছি হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের সঠিক বিচার করার জন্য।

আন্দোলনে আহত নাহিদুর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পরে সমন্বয়ক নামে চাঁদাবাজি, জায়গা দখলসহ নানান অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। যা জুলাইকে ধারণ করার বদলে বিকৃত করছে। আমরা জু্লাই যোদ্ধারা এখনো বেঁচে আছি। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের হুঁশিয়ারি করে বলতে চাই এই দিন দিন নয় আরও দিন আছে।

আন্দোলনে আহত গাজী আমান বলেন, মহিপালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অতর্কিত হামলায় পায়ে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। তখন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করেছে। আহতদের চিকিৎসা দিতেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিষেধ করেছি। ঘটনার দুই দিন পর চিকিৎসা নিয়েছিলাম। জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনে ফেনীতে হতাহতের সংখ্যা অন্য জেলার চেয়ে তুলনামূলক বেশি ছিল। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক, চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসনের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে হতাহতদের এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫ কোটি টাকার বেশি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। শহীদরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা কখনো অবমূল্যায়ন করা হবে না।

হতাহতের ঘটনায় ২২ মামলা, একটিতে চার্জশিট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় ২২টি মামলা হয়েছে। তারমধ্যে ৭টি হত্যা ও ১৫টি হত্যাচেষ্টা মামলা। ফেনী মডেল থানায় করা এসব মামলায় ২ হাজার ১৯৯ জন এজাহারনামীয় ও আরও ৪ হাজার অজ্ঞাত আসামি রয়েছে। ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন।

মতামত দিন